অনলাইন ডেক্সঃ মুন্সিগঞ্জে পদ্মার শাখা নদীতে গত ১৬ ডিসেম্বর বালুবাহী বাল্কহেডের ধাক্কায় অন্তত ৪০ যাত্রী নিয়ে একটি ট্রলার ডুবে যায়। এতে বেশ কয়েজনের প্রাণহানি ঘটে। বাল্কহেডটি জব্দ করা হলেও চালক এখনো পলাতক। রাতে এ ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধের নির্দেশনা থাকলেও তা মানতে দেখা যাচ্ছে না। অভিযোগ আছে, কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে এসব জলযান নদীপথ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।
নদীভাঙন ও নৌদুর্ঘটনা বন্ধে পদ্মা এবং শাখানদীতে বাল্কহেড চলাচলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে একাধিকবার নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
এর আগে গত ৬ অক্টোবর সন্ধ্যায় কিশোরগঞ্জ ফেরিঘাটের অদূরে মেঘনা নদীতে বাল্কহেডের ধাক্কায় একটি পর্যটকবাহী ট্রলার ডুবে যায়। এতেও ঝরে কয়েকজনের প্রাণ। শুধু এ দুটি ঘটনায় নয়, গত দেড় বছরে এমন ২৪৬টি নৌ-দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় প্রাণ ঝরেছে ৩৭৭ জনের, আর নিখোঁজ হয়েছেন ১০৪ জন।
এমন তথ্য সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বরাত দিয়ে জাতীয় কমিটি বলছে, নিবন্ধিত নৌযানের সংখ্যা ১৫ হাজার হলেও সারা দেশে বিভিন্ন ধরনের অন্তত ৮৫ হাজার নৌযান রয়েছে। অর্থাৎ প্রায় ৭০ হাজার নৌযানই নিবন্ধনহীন।
বাল্কহেড কী
বাল্কহেড শব্দটি জাহাজনির্মাণের অভিধান থেকে এসেছে। জাহাজের মধ্যে জলরোধক বেষ্টনী/ বিভাজক বা পার্টিশনকে বাল্কহেড বলে। মূলত জাহাজের কাঠামোগত অনমনীয়তা বাড়ানোর জন্যই বাল্কহেড ব্যবস্থার উদ্ভাবন। তবে সেই নামে আমাদের নদীতে যেগুলো চলাচল করে, সেসব স্রেফ বালুসহ বিভিন্ন মালামাল বহনকারী ইঞ্জিনচালিত ট্রলার। নামের সঙ্গে চেহারা বা গড়নের কোনো মিল নেই।
রাতে ঢাকা-বরিশাল নৌপথে মেঘনাসহ অধিকাংশ নদীতে মিটমিট করে জ্বলতে থাকে লালবাতিগুলোই বাল্কহেডের অবস্থান নির্দেশ করে। নদীতে কোনোরকমে মাথা জাগিয়ে চলা এসব যানের রাতের চলাফেরায় একটা বেপরোয়া ভাব ফুটে ওঠে। যদিও যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল নির্বিঘ্ন করতে সন্ধ্যার পর বাল্কহেড চলাচল নিষিদ্ধ করেছে বিআইডব্লিউটিএ। কিন্তু কার কথা কে শোনে?
বাল্কহেড নিয়ন্ত্রণ ছাড়া নদীপথকে বিপদমুক্ত রাখা যাবে না
জানা যায়, অধিকাংশ বাল্কহেডে সিগন্যাল বাতি থাকে না; আবার বালি বহনের কারণে বেশিরভাগই ডুবে থাকে পানিতে। অন্য নৌযানের চালক দেখতে না পাওয়ায় ঘটে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির ঘটনা। সাধারণত নদী থেকে রাতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের পর তা পরিবহণে বাল্কহেডগুলো ব্যবহার করা হয়ে থাকে। গোপনে ও দ্রুত পরিবহণের স্বার্থে চালকরা থাকে বেপরোয়া। রাতে এসব বাল্কহেড চলাচল বন্ধে মাঝেমাঝে লোকদেখানো অভিযান চালানো ছাড়া প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করে। এ কারণে একের পর এক ঘটছে দুর্ঘটনা। আইন না মানা এবং দুর্ঘটনার পর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার ব্যাপারে উদাসীনতাও বাল্কহেড কর্তৃক নৌদুর্ঘটনা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। আবার দুর্ঘটনার পর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অপরাধীদের উপযুক্ত বিচার হয় না। উল্লেখ্য, এর আগে বাল্কহেডের কারণে অসংখ্য দুর্ঘটনা ঘটলেও কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। ফলে বাল্কহেড চালকরা বেপরোয়া চালনায় নিরুৎসাহিত হয় না। বাল্কহেডের অবাধ চলাচলে রাশ টানতে তাই কর্তৃপক্ষের উদ্যোগী হওয়ার বিকল্প নেই। এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএ ও নৌ-পুলিশকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। পাশাপাশি অবৈধ বাল্কহেড শনাক্ত করে এগুলোকে আইনের আওতায় আনতে হবে। দুর্ঘটনায় জড়িতদের কঠোর শাস্তি প্রয়োগের মাধ্যমে অন্যদের কাছে সতর্কবার্তা পৌঁছে দিতে হবে। যাত্রীবাহী নৌযান চলাচলের রুটে রাতে বাল্কহেড-কার্গোসহ ঝুঁকিপূর্ণ নৌযান চলাচল করছে কিনা, তা সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখতে হবে। তা না হলে নৌপথে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকেই যাবে। মনে রাখতে হবে, নৌপথ নিরাপদ না হলে একদিকে যেমন দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব হবে না, তেমনি একের পর এক দুর্ঘটনা নদীপথ ব্যবহারে যাত্রীদের ক্রমেই নিরুৎসাহিত করবে। অবৈধ বাল্কহেডের চলাচল এবং সন্ধ্যায় বৈধগুলোর চলাচল পুরোপুরি বন্ধের নির্দেশনা বাস্তবায়নে কর্তৃপক্ষ কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবে, এটাই প্রত্যাশা।
সুত্রঃ বাংলানিঊজ২৪, প্রথম আলো, যুগান্তর। ছবিঃ যুগান্তর