1. admin@paribahanbarta.com : admin :
সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৪০ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :

বাংলাদেশে জনপ্রিয় হিনো AK1J বৃত্তান্ত

  • প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৩

ডেক্স রিপোর্টঃ হিনো মোটরস লিমিটেড (হিনো মোটর কর্পোরেশন) সাধারণত “হিনো” নামে পরিচিত , এটি একটি জাপানি যানবাহন প্রস্তুতকারী বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান (ট্রাক, বাস ও অন্যান্য যানবাহন সহ) হিনো-শি’এর সদর দফতর টোকিওতে অবস্থিত । মাঝারি ও ভারী ডিজেল ট্রাক ও বাস এশিয়ার অন্যতম একটি প্রধান কোম্পানিটি।
টোকিও স্টক এক্সচেঞ্জে হিনো মোটরস নিক্সিকে ২২৫ এর একটি গ্রুপ। এটি টয়োটা মোটর কর্পোরেশনের একটি সাবসিডিয়ারি এবং টয়োটা গ্রুপের ১৬ টি প্রধান কোম্পানির অন্যতম।

আমাদের দেশে মূলত Hino নামেই পরিচিত। অটোমোটিভ ইন্ডাস্ট্রিতে অন্যতম জনপ্রিয় এবং নির্ভরযোগ্য এই প্রতিষ্ঠান টি। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অটোমোবাইল কোম্পানি টয়োটা এর হেভি ভেহিক্যাল প্রোডাকশন লাইন আপ টি’ই হলো হিনো। মূলত কমার্সিয়াল ভেহিক্যাল বা বানিজ্যিক ভাবে বাস-ট্রাক এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিন তৈরি করে আসছে এই হিনো মোটরস লিমিটেড। এই প্রতিষ্ঠান টি যাত্রা শুরু করেছে ১৯৪২ সালের পহেলা মে তে (১ মে) ।

এদের বাস ও ট্রাক ইন্ডাস্ট্রি টি এদের মূল চালিকাশক্তি। এদের বাস সেক্টর টি‌ বড় হলেও এদের সব গুলো বাস চ্যাসিস বাই অ্যাক্সেল বা ২ টি অ্যাক্সেলের। RU (S’Elega), HL (Blue Ribbon), RM, RK, AK, FC, XZU এদের মধ্যে অন্যতম এবং বহুল পরিচিত।
বাংলাদেশের বাজারে হিনোর রয়েছে শক্ত অবস্থান। দক্ষিণ এশিয়ায় পাকিস্তানের পর সব থেকে বেশি হিনো এর গাড়ির প্রচলন এই দেশে। আমাদের দেশে বাসের সামনের হিনো লোগো টি’ই আজকাল প্রায় সব বাসেই শোভা পায় (বানানোর সময় বডি মেকাররা দেয়), কারন, এই হিনো লোগো‌ ছাড়া বাংলাদেশে বাস গুলো অসম্পূর্ণ মনে হয় (ভাষ্যমতে) । মূলত এই হিনো বা হিনো লোগো এর পরিচিতির বাহক হলো.

Hino AK-1J / হিনো একে-১জে
বাংলাদেশের বহুল প্রচলিত বাস মডেল টি হলো এই একে সিরিজের ১যে। মূলত ফ্রন্ট ইঞ্জিনের চ্যাসিস AK এর এই ১যে তার লং লাস্টিং পার্ফর্ম্যান্সের জন্যই জনপ্রিয়। একটা ১যে চ্যাসিস স্টক ইঞ্জিন দিয়ে একাধারে এক যুগের ও বেশি সার্ভিস দিতে সক্ষম, যা অন্য কোনো চ্যাসিস এই দামে অফার করতে পারে না।

যদিও অনেকে আমরা “একে-১জে” কে ট্রাক চ্যাসিস হিসেবে জানি, তবে তা প্রথম দিকের গুলো ছিলো। কিন্তু পরবর্তীতে তার বাস চ্যাসিসের সংস্করন বের করে। এর হুইলবেস সাইজ ৫০০০ মিলিমিটার থেকে ৫৮০০ মিলিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। পুরো চ্যাসিস টি ১০,২০০ থেকে ১১,০৮০ মিলিমিটার দৈর্ঘ্যের হয়। রিজিওন ভেদে মূলত চ্যাসিস এর দৈর্ঘ্য নির্ভর করে। তবে বডি ফ্যাব্রিকেশনের সময় তা সুবিধা মতো ছোট বড় করা যায়। সিটিং কনফিগারেশন নির্ভর করে অপারেটর ভিত্তিক। তবে ৪০ টি পর্যন্ত আরামদায়ক সিট বসানো সম্ভব।

চ্যাসিস এর সামনে থেকে প্রথম অ্যাক্সেলের দুরত্ব প্রায় ১৮৯০ মিলিমিটার এবং দ্বিতীয় অ্যাক্সেল থেকে চ্যাসিস ফ্রেমের শেষ অংশের দুরত্ব ৩১৫০ মিলিমিটার। চ্যাসিসটি প্রায় ২৪১০ মি.মি. চওড়া।
মাঝারি আকৃতির এই চ্যাসিসের ওজন ৪৫০০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। এর স্টিলের পুরুত্ব প্রায় ১০ মিলিমিটার। যার সর্বোচ্চ বহন ক্ষমতা ১৪,০০০ কেজি পর্যন্ত। ৮ বোল্ট বিশিষ্ট ২০ ইঞ্চির ৬ টি রিম রয়েছে (অতিরিক্ত একসেট স্পেয়ার হুইল) এবং ১০.০০-২০/১৪ পিআর টায়ার সাইজের সর্বমোট ৭ টি টায়ার রয়েছে এই চ্যাসিসে।
ফ্রন্ট ইঞ্জিন এর এই চ্যাসিস এর ২ টি অ্যাক্সেলের কোনো টি‌তেই নেই এয়ার সাসপেনশন। সামনে ও পেছনে লিফ স্প্রিং এর সাথে টেলিস্কোপিক শক অ্যাবসর্বার দেয়া হয়েছে। এয়ার সাসপেনশন না হলেও বেশ আরামদায়ক অন্যান্য চ্যাসিসের তুলনায়।
এবিএস বা ইবিডি না থাকার পরেও এর ব্রেকিং পার্ফর্ম্যান্স যথেষ্ট ভালো। এয়ার ব্রেক (বুস্টার সহ) এর সাথে এক্সহস্ট ব্রেক একে খুব সহজেই গতি নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। তবে ভেজা বা বৃষ্টিতে এর ব্রেকিং পার্ফর্ম্যান্স বেশ বাজে রকমের, অভিজ্ঞ চালক না হলে এটির ওভার স্পিড কন্ট্রোলিং বেশ বিপদজনক। তাই ভেজা রাস্তায় ধীরে চালানো ছাড়া উপায় নেই।

এর ইঞ্জিন টি হলো HINO J08C-NA ; যা একটি‌ Hino J08 সিরিজের ইন লাইন ফুয়েল ইঞ্জেক্টেড পাম্প বিশিষ্ট ৪ স্ট্রোকের উলম্ব সেট আপ, ওভার হেড ভালভ‌ শ্যাফ্টের ২৪ ভাল্ভ বিশিষ্ট ৭৯৬১ সিসির চার স্ট্রোক ৬ সিলিন্ডারের ন্যাচারাল অ্যাসপাইরেটেড ওয়াটার কুলড ইঞ্জিন। এর প্রতি টি সিলিন্ডারে চার টি করে ভালভ‌ রয়েছে। এর অন্য একটি টার্বো চার্জড ইউনিট রয়েছে।
ন্যাচারালি অ্যাসপাইরেটেড এই ইউনিট টি মূলত টার্বো বিহীন একটি ইঞ্জিন। টার্বো চার্জড ইঞ্জিনে মূলত এক্সহস্ট পূনরায় বাতাসের সংমিশ্রণে ইঞ্জিনে পৌঁছায় কিন্তু এই ইঞ্জিনে তা নয়। এটি প্রকৃতি থেকে সরাসরি অক্সিজেন সমৃদ্ধ বাতাস শুষে নেয়, তার অভ্যন্তরীন দহনের জন্য, যা সম্পূর্ণ ল্যাগ ফ্রি। এই ইঞ্জিনের সুবিধা হলো, এর মেইনটেইন এবং রিপেয়ার করা সহজ, অনেক দিন ব্যবহার উপযোগী, স্মুথ কারেন্ট পিক আপ রেসপন্স এবং তুলোনমূলক কম ইঞ্জিন হিটিং।

তবে এর কিছু খারাপ দিক আছে, যেমন এর ফুয়েল ইকোনমি কম এবং পাওয়ার ল্যাকিং বেড়ে যায়, যদি বাতাস ঠিক ঠাক ভাবে না পায়।‌ তাই এর এয়ার ইনটেক পার্টস গুলো, বিশেষ করে এর এয়ার ফিল্টার এবং ইনটেক হোস পাইপ নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে।
এই ইঞ্জিনের বোর ১১৪ মিলিমিটার এবং স্ট্রোক ১৩০ মিলিমিটার। এটি ৭১১ মিলিমিটার চওড়া, ১২৫৩ মিলিমিটার লম্বা এবং ৯০২ মিলিমিটার উঁচু। ইঞ্জিন অয়েল ও তেল ব্যাতিত এর ওজন ৫৬৫ কেজি।

এই ইঞ্জিন টি ২৯০০ আরপিএমে ২০৭ হর্স পাওয়ার এবং ১৫০০ আরপিএমে ৫৫৪ নিউটন মিটারের টর্ক উৎপন্ন করে (সর্বোচ্চ আউটপুট কুলান্ট সহ)। এর কুলান্ট ক্যাপাসিটি প্রায় ১১ লিটার।
এতে ব্যবহার করা হয়েছে হিনো এর নিজস্ব (‌ Model LJ06S‌ ) ট্রান্সমিশন টি যা, সর্বমোট ৭ টি গিয়ার (৬ টি সামনে ও ১ টি পেছনে) সমৃদ্ধ।

এর গিয়ার রেশিও :-
১ম – ৭.৬৬৩
২য় – ৪.৭৫১
৩য় – ২.৮৯৮
৪র্থ – ১.৮৪৪
৫ম – ১.২৮৮
৬ষ্ঠ – ১.০০০
পেছনের গিয়ার – ৭.১৭৩

পাওয়ার অ্যাক্সেল এর ঘূর্নন ৫.১২৫ আরপিএম।
এর ট্রান্সমিশনে ব্যবহার করতে হয় SAE 90, API GL-4 গ্রেডের ৯ লিটার গিয়ার অয়েল, যা প্রতি ৩০,০০০ কিলোমিটার পর পর পরিবর্তন করতে হয়।
এর ডিফারেনশিয়ালে ১৪ লিটার SAE 90, API GL-5 গ্রেডের হাইপয়েড গিয়ার অয়েল ব্যবহার করতে হয়, যা প্রতি ৩০,০০০ কিলোমিটার পর পর পরিবর্তন করতে হয়।

৭৯৬১ সিসির ন্যাচারাল অ্যাসপাইরেটেড এই ডিজেল ইঞ্জিনটি ইউরো-১ ইমিশন স্ট্যান্ডার্ড সার্টিফাইড। আকার অনুযায়ী এর পাওয়ার কম মনে হলেও এর গতি বা লোড ক্যাপাসিটি‌ বাস্তবে অনেক বেশি।
এই ইঞ্জিনের আলস্য ঘূর্নন ৫৫০ আরপিএম এবং সর্বোচ্চ‌ ঘূর্নন ৪০০০ আরপিএম পর্যন্ত। এর টপ স্পিড প্রায় ১১০ কি.মি প্রতি ঘন্টায়। তবে ৬ষ্ঠ গিয়ারে ২৩০০ আরপিএমে চালালে এটি সর্বোচ্চ ফুয়েল ইকোনমি দিতে সক্ষম ( স্পিড ৮০-৮৫ কিমি/ঘন্টা )।
এই ইঞ্জিনের অয়েল ক্যাপাসিটি ১৪.৫ লিটার। এর ইঞ্জিন অয়েল গ্রেড SAE 15W40 (API CI-4), ৪ স্ট্রোক গ্রেড বিশিষ্ট ডিজেল ইঞ্জিন লুব্রিকেন্ট অয়েল ব্যবহার করতে হবে। (বিস্তারিত জানতে ইনবক্স করুন)
এর কুলান্ট ক্যাপাসিটি প্রায় ২২ লিটার (পানি সহ)

DOT 3 অথবা DOT 4 গ্রেডের ১.৫ লিটার ব্রেক এবং ক্লাচ ফ্লুইড ব্যবহার করা হয়, যা প্রতি এক বছর পর পর পরিবর্তন করতে হয়।
এর এয়ার ফিল্টার প্রতি ৪৮,০০০ কিমি, ফুয়েল ফিল্টার এবং অয়েল ফিল্টার প্রতি ১০,০০০ কিমি পর পর পরিবর্তন করতে হয়।
এটির স্টিয়ারিং হুইল টি টেলিস্কোপিক টাইপ, যা চ্যাসিসের বেশ উঁচুতে বসানো। সামনের অ্যাক্সেল এর গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স প্রায় ২৬০ মিলিমিটার।
এর স্টিয়ারিং হুইলে ২.৫ লিটারের DEXRON II or III গ্রেডের পাওয়ার স্টিয়ারিং অয়েল ব্যবহার করতে হয়। প্রথমে, ৫০০০ কিমি তে এবং তারপর প্রতি ৬০,০০০ কিলোমিটার পর পর এটি পরিবর্তন করতে হয়।
এই চ্যাসিসের পার্ফর্ম্যান্স অনেকাংশে নির্ভর করে বাস বানানো বা বডি ফ্যাব্রিকেশনের ওপর। পরিপূর্ণ ওজন এবং নির্দিষ্ট গতি ও ভালো ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করলে এটি প্রায় ৩-৪ কি.মি. প্রতি লিটার ডিজেলের মাইলেজ দিতে পারবে।
এর ফুয়েল ট্যাংক ক্যাপাসিটি ২০০-২২০ লিটার। ২০০ লিটারে তেলে এটি খুব স্বাচ্ছন্দের সাথে, ৬০০ কিলোমিটারের ও বেশি দুরত্ব পারি দিতে সক্ষম
তবে, বডি বানানোর সময় এর ফুয়েল ট্যাংক ক্যাপাসিটি বাড়ানো হয় ৪০০ লিটার পর্যন্ত।
এতে ফুট ব্রেট, হ্যান্ড ব্রেক এবং পুশ ব্রেক রয়েছে। এর সম্পূর্ণ ব্রেক এবং ক্লাচ কাজ করে বাতাস এবং অয়েলের সংমিশ্রণে, অর্থাৎ সার্ভো এর মাধ্যমে অয়েল এবং বাতাসের সংমিশ্রণে তৈরি ফোর্স এর ব্রেক এবং ক্লাচ অপারেট করে। এবিএস না থাকলেও শুকনো রাস্তায় এর ব্রেকিং অন্যতম সেরা। কিন্তু ভেজা রাস্তায় বেশ বেগ পেতে হয় ব্রেক করতে!

লুব্রিকেশন অয়েলের জন্য রিকমেন্ডেড ব্রান্ডের মধ্যে অন্যতম হলো, Repsol,Castrol, Petronas, shell, Mobil (ইঞ্জিন অয়েল, SAE 90 গ্রেড অয়েল )

মিডরেঞ্জ চ্যাসিস হওয়ায়এতে থাকছে না এবিএস এবং এয়ার সাসপেনশন

লং টাইম সার্ভিস এর জন্য জাপানিজ ভেহিক্যাল এর খ্যাতি বিশ্ব জুড়ে। হিনো তার ব্যতিক্রম নয়। মোটামুটি ভালো ফুয়েল ইকোনমি, লং লাস্টিং পার্টস সার্ভিস, ভালো অফরোড পার্ফর্ম্যান্স, লং টাইম ইঞ্জিন পার্ফর্ম্যান্স এর জন্য হিনো একে-১জে অন্যতম সেরা। এর স্মুথ কারেন্ট পিক আপের কাছে কমবেশি সকলেই জায়গা ও অবস্থা বিশেষে ধরাশায়ী! তবে ইকোনমি রেঞ্জ মেইনটেইন করে চালালে এটা বেশি ভালো সার্ভিস দেয়

বাংলাদেশ পরিবহন সেক্টরে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা চেসিস হিনো ১জে। এখন অশোক লেলান্ড, ইসুজু, টাটা, আইশার এর ভিড়ে হিনোর বিক্রির গতি অনেক টাই কমে গেছে । তারপর ও বাংলাদেশে নন এসি বাস বলতে এখন ও হিনোর লোগোই ব্যাবহার করা হয়। এক কথায় পরিবহনে একার রাজত্ব।।

এ জাতীয় আরও খবর
Copyright © 2023. Paribahanbarta.com. All Rights Reserve.
Theme Customized By Shakil IT Park