আগে গেলে ছামাদে!!আগে গেলে ছামাদে!!
আপনি বরিশাল বিভাগের একজন অথচ “ছামাদ লঞ্চ” এর কথা শোনেননি তাহলে আপনি আসলে বরিশালবাসীই নন!! ছামাদ লঞ্চ আজো বরিশালবাসীর কাছে একটি কিংবদন্তি নাম।
মূলত ছামাদ লঞ্চ ছিলো একটা কার্গো কোষ্টাল ক্লাস ভেসেল। সমুদ্রে মালমাল পরিবহন করতো। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে এটি ভারতীয় বিমানের গোলার আঘাতে কীর্তনখোলা নদীতে ডুবে যায়।
স্বাধীনতা পর বরিশালের এক ব্যবসায়ী নিজ খরচে সরকারের কাছ থেকে চ্যানেল ক্লিয়ারের শর্তে উঠানোর অনুমতি পায়। জাহাজটি উঠিয়ে উক্ত ব্যাবসায়ী উচ্চ মূল্যে বিক্রি করে কুমিল্লার দাউদকান্দির এমপি মুন্সী আবদুল আলী সাহেবের কাছে। যেহেতু ছামাদ একটি কোষ্টাল ক্লাস ভেসেল ছিলো, তাই তখনকার সময় এটি বর্ষাকালে রকেট ষ্টীমার এর পর খুবই নির্ভরযোগ্য এবং নিরাপদ লঞ্চ ছিলো বরিশাল বাসীর কাছে। তৎকালীন সময়ে ছামাদ লঞ্চ ঢাকা সদরঘাট থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ছেড়ে রাত ১টা ২টার মধ্যে বরিশাল পৌছাতো।পরবর্তীতে সাগর লঞ্চ বরিশাল-ঢাকা রুটে আধুনিকতা আর বিলাসবহুলতার ছোয়া আনলে সেটির কাছে হেরে যেতে থাকে ছামাদ।
১৯৮৮ সালের জুলাই মাসে বরিশালের বাজার রোডের মোহন মিয়া আগের মালিকের কাছ থেকে ছামাদ লঞ্চ কিনে নেন। লঞ্চটি কেনার আগে ফাইনাল ট্রায়ালে বরিশাল থেকে ঢাকা যাত্রার প্রাক্কালে রহস্যজনক কারণে বরিশাল ঘাট ছাড়ার পর পরই মাঝ নদীতে গিয়ে অচল হয়ে পড়ে ! শোনা যায়, কেনার আগে মোহন মিয়ার ছেলে মেরাজ মিয়া জাহাজের চীফ ইঞ্জিনিয়ারকে হাত করেছিলেন। যে কারণে ফাইনাল ট্রায়ালে লঞ্চটি মাঝ নদীতে গিয়ে অচল হয়ে পড়ে। সংগত কারনেই জাহাজটির দাম কমে যায় এবং মোহন মিয়া কিনে নেন।
১৯৯১ সালে ২৯ এপ্রিল গত শতাব্দীর অন্যতম ভয়ংকর ঘূর্নিঝড়ের সময়ে বরিশালের কাউয়ার চর নোংগর করা ছিলো। কিন্তু প্রবল ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের কারনে ডুবে যায়। ধারনা করা হয় ঝড়ের কোন এক পর্যায়ে ভাটার প্রচন্ড টানে পানি কমে গেলে লঞ্চটি নদীর তলদেশে আটকিয়ে যায়। এরপর পানি বাড়তে থাকলে ডুবে যায়। পরবর্তীতে কিছু অংশ কেটে উঠানো হলেও বেশীরভাগ অংশ এখনো পানির নীচেই আছে। যেখানে এটি ডুবে আছে সেখানে একটি বয়া দিয়ে এখনো মার্ক করা আছে। আজো এই লঞ্চের উপর দিয়ে আপনার বরিশাল যেতে হয়।
যে কীর্তনখোলা নদী থেকে লঞ্চটির জন্ম সেই কীর্তনখোলা নদীতে ঘুমিয়ে আছে লঞ্চটি আজো।
সুত্রঃ শিক্ষক বাতায়ন – (গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার)। ছবিঃ গুগল থেকে নেয়া।