স্টাফ রিপোর্টারঃ গাড়ির গতিবিধি পর্যবেক্ষণ ও নিরাপত্তায় জিপিএস (গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম) বেশ জনপ্রিয়। জিপিএস নেভিগেশনে হালনাগাদ তথ্য পেতে এবং গাড়ি চালু ও বন্ধ করতে ইন্টারনেট–সংযোগ থাকতে হয়। গাড়ি চুরি বা ছিনতাই হলে চোর, ছিনতাইকারী জিপিএস যন্ত্রটি গাড়ি থেকে খুলে ফেলে এবং ইগনিশন তার জোড়া দিয়ে গাড়ি চালু করে নিয়ে যেতে পারে। জিপিএস এ ক্ষেত্রে অসহায়।
যন্ত্রটি খুলে ফেলতে যে সময় লাগবে, সে সময়ের মধ্যে গাড়ি উদ্ধারের পদক্ষেপ নেওয়া না হলে মালিক গাড়িটি তো খোয়াবেনই, মাসে মাসে দেওয়া ফিও যাবে বিফলে। এ সমস্যার সমাধানে বাজারে এসেছে নতুন একটি জিপিএস, যা জিএসএম ও জিপিএস দুই প্রযুক্তিতে চলবে। যন্ত্রটির নাম ট্যাসলক জিএসএম। এটা মোটরবাইক ও গাড়ি দুটিতেই ব্যবহার করা যায়।
মাসিক ফি নেইট্যাসলকের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এতে কোনো মাসিক ফি নেই। প্রতি মাসে ইন্টারনেট বিলও নেই। পৃথিবীর যেকোনো স্থান থেকে গাড়ি চালু বা বন্ধ করা যাবে। গাড়ি অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে চুরি বা ছিনতাই হলে উচ্চগতিতে চলন্ত অবস্থায় গাড়িটি লক করে ফেলা যাবে। এতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গাড়ির গতি কমে গাড়িটি একেবারেই বন্ধ হয়ে যাবে। থেমে যাওয়ার পর কয়েকবার গাড়ির সেলফ স্টার্ট দিলে ব্যাটারিটিও অকেজো হয়ে যাবে। যন্ত্রটির মাধ্যমে গাড়ি চালু বা বন্ধ করতেও কোনো ফোন বা খুদে বার্তা খরচ নেই।
ট্যাসলক জিএসএম এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যা গাড়ি থেকে নেমে আসার পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে গাড়ি লক করে দেবে। ব্যবহারকারী চাইলে ইঞ্জিনও লক করতে পারবেন। গাড়িটি যতবার চালু বা বন্ধ করা হবে ততবার মালিকের ফোনে সতর্কসংকেত যাবে, অনেকটা সাইরেনের মতো।
দেশের বেশির ভাগ গাড়ি চালানোর জন্য চালক নিয়োগ দেওয়া হয়। অনেক সময় চালকেরা গাড়ির শীতাতপনিয়ন্ত্রিত যন্ত্র চালু, তেল বা গ্যাসের অপচয় করেন। এই যন্ত্রের মাধ্যমে গাড়ির শীতাতপনিয়ন্ত্রিত যন্ত্র চালু হলেও মালিক জানতে পারবেন।
জিপিএসের সঙ্গে এই ডিভাইসটিতে জিএসএম সুবিধা থাকার কারণে অনলাইন ছাড়া অফলাইনেও ব্যবহার করা যায়। যেসব স্থানে ইন্টারনেট পাওয়া যায় না, সেসব স্থানেও গাড়িটি চালু বা বন্ধ করার সুযোগ রয়েছে।
ট্যাসলকের যত সুবিধা
শুধু গাড়ি নয়, ট্যাসলক জিএসএম দিয়ে মোটরসাইকেল থেকে শুরু করে মানুষ পর্যন্ত নজরদারিতে রাখা যাবে। অন্যান্য জিপিএস যন্ত্রের সব সুবিধাসহ এর ৩৭টি সুবিধা রয়েছে। মোটরবাইকের ক্ষেত্রে গাড়িটি অবশ্যই লক অবস্থায় রাখতে হবে। কেউ মোটরবাইক নিয়ে যেতে চাইলে মালিক বার্তা (নোটিফিকেশন) পাবেন। গাড়ি বা মোটরসাইকেলের মালিকের অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যাপ থেকে নতুন ইউজার যুক্ত করতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে বাইকের চাবি ছাড়াও মোটরবাইক ব্যবহারকারী পাবেন বাইকের পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ।
দেশেই এর উদ্ভাবন
ট্যাসলক জিএসএমের উদ্ভাবক বাংলাদেশের তরুণ রাদভী রেজা। তিনি পরিবহন বার্তা প্রতিনিধিকে জানান, ‘আমি একজন অটোমোবাইলপ্রেমী। ছোটবেলা থেকেই গাড়ি ও মোটরবাইকের প্রতি আমার আগ্রহ। আমার সংগ্রহে রয়েছে নামীদামি নিমার্তার বেশ কিছু মোটরবাইক। নিরাপত্তা যন্ত্র নিয়ে ২০১৬ থেকে কাজ করি। ১৪টির বেশি দেশ ঘুরেছি। চীনের স্টিলমেট বা জাপানের স্করপিও আমাকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। আমি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কথা বলি। তাদের যন্ত্র সহজেই হ্যাক করা সম্ভব। তবে রাশিয়ার নিরাপত্তা যন্ত্র পুরোই আলাদা। লন্ডনের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে কর্মরত আমার এক বন্ধু রাশিয়ার স্পাইক যন্ত্রটি সম্পর্কে আমাকে জানায়। ওটির নিরাপত্তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আরও ফিচার যোগ করে ট্যাসলক তৈরি করি। গ্রাহকের প্রয়োজন অনুসারে আমরা নিরাপত্তার জন্য সব ধরনের সেবা যুক্ত করতে সক্ষম।’
গুগলের নিরাপত্তা ডিভাইস সারা পৃথিবীতে স্বীকৃত। তবে ট্যাসলক জিএসএমে রয়েছে গুগলের চেয়েও বেশি সুবিধা। জনাব রাদভী রেজা বলেন, ‘আমাদের মোট তিনটি ব্যাকআপ সার্ভার রয়েছে। গুগল ম্যাপস ছাড়াও “এ” এবং বাইডু মানচিত্র আমরা ব্যবহার করি। ফলে জিপিএস না থাকলেও জিএসএমের সর্বোচ্চ সেবা এই যন্ত্রে পাওয়া সম্ভব। ট্যাসলক জিএসএম ব্যাটারির মাত্র ০.০০২ মিলি অ্যাম্পিয়ার পার আওয়ার (এমএএইচ) খরচ করে।’
বাংলাদেশে এক বছরের বিক্রয়োত্তর সেবাসহ ট্যাসলক জিএসএমের দাম সাড়ে তিন হাজার টাকা।
TASSLOCK এখন দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্ব ব্যাপী। TASSLOCK রপ্তানী হচ্ছে এখন সৌদি আরব, মালয়শিয়া, ভারত, ইংল্যান্ড এ। এসব দেশে ট্যাসলক এর আছে নিজস্ব অফিস ও বিক্রয় সেবা।